রাজ্য সরকারি কর্মীরা একসঙ্গে তিন মাসের বেতন পাবেন | West Bengal Govt Employee Salary New Update 2023

আমাদের দেশ অর্থাৎ ভারত বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। সেই আদিকাল থেকে এদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। ফলে এই অর্থনীতির কোন স্থিরতা নেই। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন ছোট বড়ো শিল্প, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিকাশ লাভ করার পর আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে একটু শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিশ্বের উন্নত দেশগুলির সারির মধ্যে এখনও এ দেশ আসতে পারেনি। দারিদ্রতা এখনও এখানকার জনগণের চিরসঙ্গী। এখনো আমাদের দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ তো কোনো রকমে যা হোক একটা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবন ধারণ করে থাকে। আবার কেউ যাও বা ভাগ্যের দৌলতে একটা সরকারি চাকরি পায়, তাও তার বেতনের সেই অল্প পরিমাণ টাকায় এই দুর্মূল্যের বাজারে আর কিছুই সে ভবিষ্যতের জন্য অবশিষ্ট রাখতে পারে না। ফলে ভবিষ্যতে কোন দুর্ঘটনা বা বিপদবশত যদি অর্থের প্রয়োজন হয় তখন মাথায় হাত পড়ে এই সকল শ্রেণীর মানুষদের। তখন সেই সমস্যা থেকে সমাধানের উপায় খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে তারা। 

         আমাদের দেশের এইসব মানুষের কথা চিন্তা করেই কেন্দ্রীয় সরকার এমন এক নতুন নিয়ম চালু করেছে যেখানে সেই সমস্ত ব্যক্তিরা যারা বর্তমানে কোন সরকারি চাকরিতে কর্মরত তারা যদি ইচ্ছুক থাকেন তাহলে নিজেদের তিন মাসের বেতন একসঙ্গে অগ্রিম প্রত্যাহার করতে পারেন। এই নতুন নিয়মের নাম রাখা হয়েছে Salary Overdraft Facility। দীর্ঘ আলোচনার পর কেন্দ্রীয় সরকারের এ কথা মনে হয়েছে যে যদি এমনটা করা যায় তাহলে দেশের মানুষের একটা বিরাট অংশ দারুণভাবে উপকৃত হবে। তাই মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই নিয়ম ইতিমধ্যেই সারা দেশে চালু হয়ে গেছে। তবে যেহেতু শুধুমাত্র কেন্দ্রের তরফ থেকে এই ঘোষণা প্রথম করা হয়েছে সেহেতু শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারই কর্মীদের কাছেই এই সুবিধা এখন উপলব্ধ আছে। এই নতুন নিয়মের আওতায় সুবিধা পেয়েছেন দেশের বহু মানুষ।

      কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু রাজ্যের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও এই সুবিধা তাদের অধীনস্থ সরকারি কর্মীদের প্রদান করার ঘোষণা শোনা গেছে। যার তালিকায় রয়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের নামও। এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে প্রধানত যে সুবিধা সরকারগণ তাদের কর্মচারীদের দেওয়ার ঘোষণা জানিয়েছে তা হল প্রয়োজনীয় কোন কারণবশত ভবিষ্যতে যদি কোন ব্যক্তির অর্থের প্রয়োজন হয় এবং সেই মুহূর্তে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সেই পরিমাণ অর্থ না থাকে, সেক্ষেত্রে তারা যে ব্যাংকে নিজেদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট চালু রেখেছেন সেই ব্যাংক থেকে আগামী তিন মাসের বেতন একসঙ্গে প্রত্যাহার করতে সক্ষম হবেন। ফলে এর মাধ্যমে জনগণের বেশ খানিকটা সুবিধা হবে বলে মনে করা হয়।

      এছাড়া এ কথাও বলা হয়েছে যে এখানে যে সমস্ত সরকারি কর্মীরা বিশেষ প্রয়োজনে সুবিধা গ্রহণ করার জন্য আবেদন জানাবেন তাদের আগামী তিন মাসের বেতন দেওয়া হবে একবারে কিন্তু বিষয়টি হবে একটি লোনের পদ্ধতিতে। তবে সরকারি মারফত খবর পাওয়া গেছে যে জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এখানে সুদের হার রাখা হয়েছে মাত্র ১ থেকে ৩ শতাংশ। কাজেই এখানে সুদের হার প্রায় নামমাত্র থাকায় জনগণ খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে এখানে তারা সুবিধাও লাভ করবেন আবার অন্যদিকে তাদের চড়া হারে কোনো সুদও প্রদান করতে হবে না। 

     তবে এই স্যালারি ওভারড্রাফ্ট ফেসিলিটি কিন্তু সব ব্যাংকে উপলব্ধ নয়। অর্থাৎ বিভিন্ন ছোটখাট ব্যাংক যেমন কোঅপারেটিভ ব্যাংক বা কোন গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদি স্থানে এই সুবিধা কিন্তু কেউ পাবে না। শুধুমাত্র দেশের বিশেষ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক যেমন স্টেট ব্যাংক, সেন্ট্রাল ব্যাংক, পি এন বি, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, ইত্যাদিতেই এই সুবিধা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই যেসমস্ত সরকারি কর্মীদের অ্যাকাউন্ট এই সকল ব্যাংকে রয়েছে তারাই এই সুবিধা পেয়ে থাকবেন। 

      যখন কোন ব্যক্তির বিশেষ প্রয়োজনবশত এই সুবিধা দরকার হবে তখন এখানে আবেদন করার জন্য সেই প্রার্থীকে বিশেষ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যেমন,

১. প্রার্থীকে প্রথমে সেই নির্দিষ্ট ব্যাংকে অর্থাৎ যে ব্যাংকে তার বেতনের অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেই ব্যাংকে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।

২. এরপর সেখানে বলতে হবে যে তারা এই স্যালারি ওভারড্রাফ্ট ফেসিলিটি সুবিধা নিতে ইচ্ছুক এবং এ সম্পর্কে তাদের নিজেদের প্রয়োজনের কথাটি জানাতে হবে।

৩. তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে প্রার্থীকে একটি কন্ট্র্যাক্ট ফর্ম দেওয়া হবে। 

৪. সেই ফর্মটি পূরণ করে ও তার সঙ্গে যেসকল কাগজপত্র দরকারি সেগুলি একত্রিত করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

৫. এরপর ব্যাংক যদি প্রার্থীকে উপযুক্ত মনে করে তাহলে তারা সেই ব্যক্তিকে ঐ সুবিধা প্রদান করবে।

কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত:-

কিন্তু এক্ষেত্রে উপরোক্ত এই সুবিধা পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। যেগুলি পালন করলে তবেই প্রার্থীরা এখানে সুবিধা পেতে পারেন। 

১. এক্ষেত্রে প্রার্থীদের যে পরিমাণ অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে বেতন হিসেবে প্রদান করা হয় সেই অর্থই অগ্ৰিম দেওয়া হবে।

২. শুধুমাত্র যেসকল কর্মীরা স্থায়ী মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন তারাই এ সুবিধা পাবেন। যারা কোন কমিশন ভিত্তিক কাজে নিযুক্ত তারা এখানে উপযুক্ত প্রার্থী নন।

৩. আরো বলা হয়েছে যে কোন ব্যক্তি যদি আগে কোনরকম ঋণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রহণ করে থাকেন অথচ সেই ঋণের টাকা এখনো তিনি শোধ করতে পারেননি তাহলে এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়া হবে না।

আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ সমূহ:-

এখানে আবেদনের জন্য কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা ধার্য করা হয়নি। উপরোক্ত এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে যে সমস্ত সরকারি কর্মচারীরা আবেদন করতে প্রয়োজন বোধ করেন তাদের নির্দিষ্ট কোন তারিখের সীমার মধ্যে আবেদন করতে হবে না। যখন তাদের প্রয়োজন হবে তখনই তারা এখানে সুবিধা লাভের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।


আরও খবর পড়ুন: CLICK HERE

Join Telegram Channel : CLICK HERE

Leave a comment