চাপে পড়ে সরকারি কর্মীদের DA মেটানোর সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের | WB Govt Employee DA Update

বহুদিন ধরে আমাদের রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাদের পাওনা ডিএ র দাবিতে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ করে চলেছেন। প্রথমে হাইকোর্টের কাছে মামলা দাখিল করা হয় তারপর তা গিয়ে পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্টের দরজায়। সেখানেও দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলে আসছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এর কোন রকম ফয়সালা করা সম্ভব হয়নি। এদিকে রাজ্য সরকারি কর্মীরা অত্যন্ত রুষ্ট হয়ে রয়েছে কারণ বার বার ধরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েও তিনি তাদেরকে কোনরকম গুরুত্ব দেননি। উল্টে তিনি বলেছেন যে সমস্ত পাওনা মহার্ঘভাতা তিনি আগেই মিটিয়ে দিয়েছেন।

          গত ডিসেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু অনিবার্য কারণবশত সেই শুনানিও সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়নি। সেদিন বলা হয়েছিল যে জানুয়ারি মাসে আরেকটি শুনানির তারিখ দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি করে শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এতবার বিক্ষোভ করার পর রাজ্য সরকারের টনক একটু হলেও নড়বে বলে আশা করেছিলেন এই সরকারি কর্মচারীরা। যদিও রাজ্য সরকার তাদেরকে একসময় বলেছিল যে সম্পূর্ণটা না হলেও কিছুটা পরিমাণ মহার্ঘভাতা অন্তত তাদের মিটিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী আশায় বুক বেঁধে রেখেছিলেন সকল কর্মচারীরা। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো রাজ্য সরকার যেন তার প্রতিশ্রুতিও ক্রমশ ভুলতে বসলো। পূরণ হলো না এইসব কর্মচারীদের এই বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দেওয়ার দাবি। 

         এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ও পেনশন ভোগিরা বছরে দুবার বর্ধিত ডিএ র সুবিধা ভোগ করে থাকে। এছাড়াও তাদের বেতনও অনেক অংশে বৃদ্ধি পাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারের তরফ থেকে। আর সেখানেই অন্যদিকে আমাদের রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই কথা মেনে নেওয়াটা সত্যিই অসম্ভব। প্রথমে সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মীরা হাইকোর্টের কাছে মামলা করেছিলেন যে এবার থেকে তাদের মহার্ঘ্য ভাতাও কেন্দ্রীয় হারে বেশি করতে হবে। কারণ বর্তমানে যা দূর্মূল্যের বাজার করেছে তাতে রাজ্য সরকারের সামান্যতম মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধিতে তাদের পক্ষে এটে ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু সে সব কথা তো দূরে থাক এখন রাজ্য সরকার তাদেরকে তাদের পাওনা ডিএ টুকুও 

মেটাবে নাকি সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। 

        এই ডিএ মামলা নিয়ে বর্তমানে সত্যিই প্রচন্ড চাপের মুখে আছে আমাদের রাজ্য সরকার। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সম্মেলনে যে রূপ মন্তব্য করেছেন সে বিষয় থেকে এ কথা বোঝা যায় যে বর্তমানে যদি মহার্ঘ ভাতা মেটানো হয় তাহলে রাজ্যের কোষাগার প্রায় শূন্য হয়ে পড়বে। এমনিতেই রাজ্যে অনেক ধরনের জনমুখী প্রকল্প চালু করেছেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বাস্থ্য সাথী, খাদ্য সাথী ও লক্ষীর ভান্ডার ইত্যাদি। তার বক্তব্য এই সমস্ত প্রকল্পগুলির জন্য বরাদ্দ টাকা জোগাড় করতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য সরকার। কাজেই এই পরিস্থিতিতে যদি তাদের মহার্ঘ ভাতা মেটানোর দিক বিবেচনা করতে হয়, তাহলে এই সমস্ত প্রকল্প বন্ধ রাখতে হবে। সেই কারণেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বিক্ষোভ দেখে প্রথমে তাদের শান্ত করার জন্য তিনি ৩ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘ ভাতা পূরণের দাবি ঘোষণা করলেও এখন তা নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করেননি।

      যদিও এ বিষয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীরা বারবার বিক্ষোভ করেছেন, কোর্টের দুয়ারে হাজির হয়েছেন এমনকি কর্মবিরতীও পালন করেছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার তাদের সেই কর্মসূচিতে কোন কর্ণপাত করেননি। তাই এবারে তারা ঘোষণা করেছেন যে এই সব কিছুর পরেও যদি রাজ্য সরকারের টনক না নড়ে তাহলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি জারি রাখবেন। এই সকল কর্মচারীদের একটাই ক্ষোভ যে রাজ্য সরকার অন্যান্য সমস্ত কাজ করার বেলায় প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে পারছেন কিন্তু তাদের এই বকেয়া মহার্ঘ ভাতা পূরণের বেলায়েই যত টান পড়ছে তাদের কোষাগরে‌। রাজ্য কর্মী সংগঠন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে যে শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে সেই শুনানির পরও যদি রাজ্য সরকার তার সিদ্ধান্তে  অবিচল থাকে তাহলে এবারে রাজ্য সরকারি কর্মীরা এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবেন। আগামী ২৭শে জানুয়ারি তারিখে কলকাতা পৌরসভার কাছে তাদের সেই কর্মবিরতি পালিত হবে। এতে শামিল হবেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে আইনজীবী ও রাজ্য সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীরা। 

       কর্মী সংগঠন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে যে আগামী ৮ জানুয়ারি কর্মী সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এখানেই তাদের আসন্ন আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এবং যতদিন পর্যন্ত না সরকার তাদের কথায় নড়েচড়ে বসছে ততদিন পর্যন্ত এই ভাবেই তারা সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করে যাবেন। তবে যাই হোক, এক কথায় বলা যায় যে এই মহার্ঘ ভাতা পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বর্তমানে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার বেশ উভয় সংকটের মধ্যে রয়েছে।


আরও খবর পড়ুন: CLICK HERE

Join Telegram Channel : CLICK HERE

Leave a comment