কেন্দ্রের এই নতুন প্রকল্পে আবেদন করলেই প্রত্যেকে পাবেন মাসে ৩০০০ টাকা পেনশন | Central Govt New Scheme 2023

আমাদের দেশ অর্থাৎ ভারত বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। সেই আদিকাল থেকে এদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। ফলে এই অর্থনীতির কোন স্থিরতা নেই। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন ছোট বড়ো শিল্প, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিকাশ লাভ করার পর আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে একটু শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিশ্বের উন্নত দেশগুলির সারির মধ্যে এখনও এ দেশ আসতে পারেনি। দারিদ্রতা এখনও এখানকার জনগণের চিরসঙ্গী। এখনো আমাদের দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। খুব কষ্ট করে তারা নিজেদের জীবনকে যাপন করে থাকেন। কারণ বর্তমানে যা দুর্মূল্যের বাজার করেছে সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই সকল মানুষের নিজেদের পেট চালিয়ে আর ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করা প্রায় অসম্ভব। ফলে কিছুই সে ভবিষ্যতের জন্য অবশিষ্ট রাখতে পারে না। ফলে ভবিষ্যতে কোন দুর্ঘটনা বা বিপদবশত যদি অর্থের প্রয়োজন হয় তখন মাথায় হাত পড়ে এই সকল শ্রেণীর মানুষদের। তখন সেই সমস্যা থেকে সমাধানের উপায় খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে তারা। 
         আমাদের দেশের এইসব মানুষের কথা চিন্তা করেই কেন্দ্রীয় সরকার আগেই এমন এক প্রকল্প চালু করেছিল যেখানে সেই সমস্ত কৃষক শ্রেণীর মানুষদের অনেকাংশে উপকার হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেছিলেন। আর তা সম্ভবও হয়েছিল। এই প্রকল্পের নাম হল প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি যোজনা। দীর্ঘ আলোচনার পর কেন্দ্রীয় সরকারের এ কথা মনে হয়েছে যে যদি এমনটা করা যায় তাহলে দেশের মানুষের একটা বিরাট অংশ দারুণভাবে উপকৃত হবে। তাই মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্প  ইতিমধ্যেই সারা দেশে চালু হয়ে গেছে। আর এর মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি জনগণ ইতিমধ্যে বেশ খানিকটা উপকৃতও হয়েছে বলে সমীক্ষা মারফত জানা গিয়েছে। তবে এখনো এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পেতে পারেন দেশের বহু মানুষ।
         দেশের আর্থিক অসংগতিকে খানিকটা মোকাবিলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই রূপ প্রকল্পের সূচনা। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি কৃষক বার্ষিক ৬ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। এছাড়াও তাদের চাষের কাজে কোনো টাকার অভাব না হয় সেইজন্য কেন্দ্রীয় সরকার দেশের প্রতিটি দরিদ্র কৃষককে অল্প সুদে কৃষি ভিত্তিক ঋন দানের ব্যবস্থা করেছেন এর দ্বারা। তাই বলা যায় যে ভারতের কৃষক সম্প্রদায়ের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী এই যে নতুন প্রকল্পের সূচনা করেছেন, সেটি ভারতের এই সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য এখনও পর্যন্ত চালু করা প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি মাইল ফলক বিশেষ।
       কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অত্যন্ত সহৃদয় এবং দেশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবান। তিনি তার প্রতিটি কর্মসূচির মাধ্যমে এ কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে সবকিছুর পিছনে তার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা। তাই তিনি এইখানেই থেমে থাকেননি। যেমনটা উপরে বলা হয়েছে যে কৃষকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে উপরোক্ত কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্প ছাড়াও তিনি বর্তমানে আরও এক প্রকল্প চালু করেছেন। যার নাম হলো প্রধানমন্ত্রী মানধন যোজনা। নতুন এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য হলো দেশের কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষেরা যারা সবকিছু চালিয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন না, তাদের পাশে দাঁড়ানো। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সমস্ত মানুষ যারা কৃষক শ্রেণীতে অবস্থান করে থাকেন তারা নিজেদের বৃদ্ধ বয়সের পর প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন। যাতে তারা বৃদ্ধ বয়সে যখন আর পরিশ্রম করতে পারবেন না তখন কোন দিকে তাদের অভাব না হয় – এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের সৃষ্টি করেছেন। এবার চলুন এই মানধন যোজনা সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আবেদনের জন্য কি ধরনের যোগ্যতা দরকার:-
উপরোক্ত এই প্রধানমন্ত্রী মান ধন যোজনায় সুবিধা লাভ করতে গেলে ইচ্ছুক প্রার্থীদের আবেদনের জন্য বেশ কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতায় থাকতে হবে। তাহলেই তাদের এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য উপযুক্ত বলে মানা হবে।
১. এই প্রকল্পের আওতায় কেবলমাত্র ভারতের কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষেরাই সুবিধা পেয়ে থাকবে। অন্য কোন ব্যক্তি এখানে আবেদনের যোগ্য নয়।
২. এক্ষেত্রে আবেদনের জন্য অবশ্যই প্রার্থীকে একজন ভারতের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী নাগরিক হয়ে থাকতে হবে।
৩. আবেদনকারীর নিজস্ব সক্রিয় একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকা আবশ্যক। অন্য কারোর একাউন্টে এখানে টাকা দেওয়া হবে না।
৪. আবেদনের জন্য যে সমস্ত নথিপত্র দরকার সেগুলি সব আবেদনকারীর নিজের নামে হতে হবে।
বয়স সীমা:-
এখানে আবেদনের জন্য প্রার্থীদের বয়সসীমা সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের উর্ধ্বে হতে হবে। তবে বয়সের ঊর্ধ্বসীমার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

কি কি নথিপত্র প্রয়োজনীয়:-
প্রধানমন্ত্রী মানধন যোজনার আওতায় সুযোগ-সুবিধা পেতে গেলে প্রার্থীদের প্রথমে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। তবে আবেদন করতে গেলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস দরকার হবে। এগুলি হল,
১. নিজস্ব এক কপি বা দু কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
২. নিজস্ব একটি ফটো আইডি প্রুফ (আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স যেকোনো)।
৩. প্রার্থীদের এলাকায় থাকেন সেই এলাকার পঞ্চায়েত প্রদত্ত একটি স্থায়ী বাসিন্দা সার্টিফিকেট।
৪. পঞ্চায়েত প্রদত্ত একটি ইনকাম সার্টিফিকেট যেটি তার বার্ষিক আয় সূচনা করবে।
৫. প্রার্থীর জমি – জায়গার সমস্ত কাগজপত্রের এক কপি করে জেরক্স।
      মনে রাখবেন যে উপরে উল্লেখিত এই সকল ডকুমেন্টগুলি ছাড়া কোন প্রার্থী যদি আবেদন করতে আসেন তাকে কোনোভাবেই আবেদনের জন্য গ্রহণ করা হবে না। তাই অবশ্যই এই সকল নদী পত্রগুলি আবেদনের সময়ে নিজেদের সঙ্গে রাখবেন।
আবেদন পদ্ধতি:-
প্রধানমন্ত্রী মানধন যোজনা প্রকল্পে আবেদন করতে গেলে সমস্ত ইচ্ছুক প্রার্থীদেরকে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
১. আবেদনকারী প্রার্থীকে সর্বপ্রথম তার নিকটবর্তী যে ব্যাংক এই ধরনের সুবিধা প্রদান করে, যেখানে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
২. তারপর সেই ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে মানধন যোজনার অধীনে একটি অ্যাকাউন্ট তাদেরকে ওপেন করতে হবে।
৩. প্রথমে একাউন্ট খুলতে কোন টাকা পয়সা লাগবে না। কিন্তু তারপর থেকে প্রতিমাসে আবেদনকারীরা নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী যেমন খুশি টাকা জমা করতে পারেন। 
৪. এরপর যতদিন না পর্যন্ত তাদের ৬০ বছর হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তাদের অর্থ বিনিয়োগ করে যেতে হবে। ৬০ বছর অতিক্রম করলে প্রার্থীরা প্রতি মাসে নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তিন হাজার টাকা করে পেনশন প্রত্যাহার করতে পারবেন।
আবেদনের জন্য নির্ধারিত সময়সূচী:-
এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য সরকার মারফত কোনরকম নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ও তারিখ ঠিক করে দেওয়া হয়নি। তাই এখানে আবেদন শুরু বা শেষ হওয়ার কোন নির্দিষ্ট তারিখও নেই। প্রার্থীরা যদি ইচ্ছুক থাকেন এবং যদি এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হন তাহলে তারা যখন খুশি যেদিন খুশি আবেদন জানাতে পারেন এখানে।

Leave a comment