নতুন বছর পড়তে না পড়তে একের পর এক সুসংবাদ সরকারের পক্ষ থেকে যেন ক্রমশই লেগে আছে। প্রতিদিনই হয় রাজ্য নয় কেন্দ্র যেকোনো সরকারের কাছ থেকে কোনো রকম চাকরিতে নিয়োগ বা কোন দারুন প্রকল্প বা কখনো বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা আমরা প্রায় শুনেই আসছি। কিন্তু আজ আমরা এখানে আসা সকল পাঠকদের এমন এক খবর দিতে চলেছি যেটা শুনলে তাদের মন অত্যন্ত আনন্দচ্ছল হয়ে উঠবে। আর তা হল এই যে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে রাজ্যের বেকার ছেলেমেয়েদের একটা বিরাট অংশের। সম্প্রতি রাজ্যে যে টেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার ফলাফল প্রকাশ করার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাস অর্থাৎ জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিক করেই এই টেট পরীক্ষার ফল পর্ষদ কর্তৃক নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে খবর পাওয়া গেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান শেষে রাজ্যজুড়ে যে টেট পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছিল তাতে অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং সহজভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তরফ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে যে পরীক্ষার দিন কোনরকম দুর্নীতির আভাস পাননি তারা। এমনকি কোনভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারও ঘটেনি। সব মিলিয়ে বিগত প্রায় কয়েক বছর যখন থেকে এক্ষেত্রে দুর্নীতি ধরা পড়েছে তখনকার তুলনায় এবছর পরীক্ষা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন করা হয়েছে বলেই সরকার সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। কাজেই এবারে সেই সমস্ত প্রার্থীরা যারা এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তাদের আর কোন ভয় থাকার সম্ভাবনা নেই।
গত ১১ ই ডিসেম্বর সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রাইমারি টেট পরীক্ষা। এতে অংশগ্রহণ করা মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লক্ষ এর কাছাকাছি। কাজেই স্পষ্টভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এতদিন ধরে কোনরকম নিয়োগ না হওয়ায় বা যারা শিক্ষক-শিক্ষিকা হবার স্বপ্ন বুকে আগলে নিয়ে বেঁচে ছিলেন সেই সকল প্রার্থীরা অত্যন্ত ব্যাকুল হয়েছিলেন এই সুযোগের জন্য। যার প্রমাণই হল এই বিপুল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। তবে যাই হোক রাজ্যের সকল বেকার চাকরি প্রার্থীর লড়াইয়ের ফলই বলা যেতে পারে যে দীর্ঘ সময় পর আবারও এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই এবারে সকল পরীক্ষার্থী এই আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন যে এবারে হয়তো তারা নিজেদের যোগ্যতার সঠিক দাম পাবেন।
২০১১ সালের যে প্রাইমারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতেই বিভিন্ন দুর্নীতির সূচনা হয় সারা রাজ্যে। আস্তে আস্তে এই দুর্নীতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে যখন অনেক যোগ্য প্রার্থীদেরও মেধা তালিকা থেকে নাম সরিয়ে অনুপযুক্ত প্রার্থীদের কে সেই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়ে থাকে। যদিও বহুবার এই নিয়ে বিভিন্ন লড়াই করেছেন পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। অবশেষে সদ্য আসা হাইকোর্টের এক জাজ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলার ফয়সালা করেন। তিনি ন্যায় বিচার পাইয়ে দেন সেই সমস্ত পরীক্ষার্থীদের যারা কষ্ট করে, খেটে, বুকে স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন জীবনের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। তাই অবশেষে জয় হয় এই সকল আতুর চাকরিপ্রার্থীদেরই। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আবার ঘোষণা করা হয় প্রাইমারি টেট পরীক্ষার তারিখের এবং সেই সকল আশাহত পরীক্ষার্থী আবারও সুযোগ পান নিজেদের স্বপ্ন সত্যি করে তোলার।
যেহেতু বলা হয়েছে যে এই মাসেই প্রাইমারি টেট পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতে চলেছে সেহেতু রাজ্যের সকল পরীক্ষার্থী যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তারা অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছেন নিজেদের ফলাফল জানার জন্য। সম্প্রতি জানুয়ারি মাসেই প্রকাশ করা হয়েছে পরীক্ষার উত্তরপত্র। সকল পরীক্ষার্থীরা নিজেদের উত্তরপত্র ডাউনলোড করে তা দেখেছেন এবং অনেকেরই উত্তরপত্রে বিভিন্ন ভূল ত্রুটি আসার কারণে তা রিভিউ করা হয়েছে। আর এই কারণেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে যে আর যাতে কোনো ভুল না হয় সেই জন্যই তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই রেজাল্ট গুলি তৈরি করছেন। যদি দ্বিতীয় কোনো সমস্যা না আসে, তাহলে খুব শীঘ্রই তারা অফিসিয়ালি প্রার্থীদের এই রেজাল্ট গুলি প্রকাশ করবেন।
পর্ষদ কর্তৃক জানান হয়েছে যে ওয়েবসাইট থেকে প্রার্থীরা নিজেদের উত্তরপত্র মিলিয়ে দেখেছেন সেই একই ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের ফলাফল দেখতে হবে। এর জন্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে প্রথমে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটটি খুলে নিজস্ব ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজে নিজের একাউন্টে লগইন করতে হবে। তারপর প্রাইমারি টেট ২০২২ অপশন এর নিচে যে Result লিংকটি আসবে তাতে ক্লিক করতে হবে আর তারপর নিজেদের অ্যাডমিট কার্ডের রোল নাম্বার, ডেট অফ বার্থ এবং একটি ক্যাপচা কোড এন্ট্রি করে প্রার্থীদের কে নিজেদের রেজাল্ট চেক করতে হবে।
তাহলে এখন হাতে গোনা আর মাত্র কয়েক দিন। তারপরেই পশ্চিমবঙ্গের সকল পরীক্ষার্থীরা যারা এতদিন ধরে দীর্ঘ প্রতীক্ষা করে করে অবশেষে একটা সুযোগ পেয়েছিলেন এবং যথাযথ পরিশ্রম করে সেই সুযোগকে সদ্ব্যবহার করেছেন, তাদের সকল পরিশ্রম সার্থক হবে। সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে জানুয়ারি মাসের শেষ দিক করে বা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই এই ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তাহলে এখন অপেক্ষা করা ছাড়া পরীক্ষার্থীদের আর কোনো উপায় নেই। তাদের শুধু দেখতে হবে আদৌ কি সরকার সকল প্রকার দুর্নীতি ভুলে উপযুক্ত প্রার্থীদের সুযোগ দেয় নিজেদের স্বপ্ন সত্যি করার নাকি সেই আগের বারের মতোই অর্থের জেরে ও ক্ষমতার জেরে অযোগ্য প্রার্থীরা অন্যায়ভাবে এখানে মনোনয়নপত্র পায়। তবে সবদিক বিবেচনা করে এবারে যা বোঝা যাচ্ছে যে গত কয়েক বছরের ন্যায় এ বছর অনুষ্ঠিত হওয়া প্রাইমারি পরীক্ষায় আর কোন কারচুপির সম্ভাবনা নেই। সকল পরীক্ষার্থী এবারে তাদের যোগ্য সম্মান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।