কলকাতা, ৬ এপ্রিল ২০২৫: ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের তরফে SSC মামলায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে আবারো রাত পোহাতেই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আগামী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে রয়েছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শুনানি। এসএসসি মামলার ফলে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করা হয়েছে এবং কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিল করা হয়েছিল প্রাইমারি দুর্নীতির মামলায়। তবে ডিভিশন বেঞ্চের তরফে এই নিয়োগের ওপর স্টে পড়ে গিয়েছে অবশেষে এই মামলার রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, যাদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এই নিয়োগে কতটা বৈধ এবং কতটা অবৈধভাবে করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এসএসসি কেলেঙ্কারির রায়ে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পর থেকেই ২০১৬ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের বুকের মধ্যে ধপ পোকানি বেড়ে গিয়েছে।
২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল যেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছে, যার শুনানি আগামীকাল বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চে হবে। তবে এই নিয়োগ শেষ পরিণতি কি হতে চলেছে তা নিয়ে সকলের মনে সংশয় রয়েছে।
ইতিমধ্যে এই নিয়োগের উপর ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ওএমআর শিট নষ্টের অভিযোগ রয়েছে যার উপর তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এসএসসি রায়ের পর প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে কারণ দুটো নিয়োগের পটভূমি প্রায় একই রকম। এছাড়াও বিচারপতিদের অনেকের মুখে শোনা গিয়েছে SSC তুলনায় প্রাইমারিতে আরো বেশি দুর্নীতি রয়েছে।
তবে রাজ্য সরকার শিক্ষা দপ্তরে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে তা হাতেনাতে ধরা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। SSC ক্ষেত্রে যেহেতু ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে তাই প্রাইমারি ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়নি এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এ ব্যাপারে অনেক শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া রয়েছে তারা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছে এবং অনেক শিক্ষকের মাথার উপরে ঋণের বোঝা রয়েছে এবং চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে সংকটে পড়বেন।
তবে রাজ্য সরকারের তরফ বলা হয়েছে প্রাইমারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন দুর্নীতি হয়নি। এই নিয়োগ রক্ষার জন্য এবং এই নিয়োগে দুর্নীতি হয়নি এ কথা তুলে ধরার জন্য আইনিভাবে তারা কলকাতা হাইকোর্টে সমস্ত তথ্য প্রমাণ দিয়ে শিক্ষকদের চাকরি রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রায় যদি রাজ্য সরকারের পক্ষে না যায় অর্থাৎ শিক্ষকদের পক্ষে না যায় তাহলে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই মামলার রায় শুধু ৩৬ হাজার শিক্ষকের ভাগ্যই নির্ধারণ করবে না, বরং রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করবে। আগামীকালের শুনানির ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্যের শিক্ষক সমাজ।