পশ্চিমবঙ্গের OBC সংরক্ষণ নিয়ে আবারও উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তৈরি নতুন OBC তালিকা ও সেই সংক্রান্ত সমীক্ষার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে একটি নতুন মামলা। ফলে OBC তালিকা ঘিরে বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল। মূল মামলাকারী অমলচন্দ্র দাসের অভিযোগ, “ত্রুটিপূর্ণ সমীক্ষা”-র ভিত্তিতেই এই তালিকা প্রস্তুত হয়েছে, যা সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে।
কী নিয়ে এই নতুন মামলা?
রাজ্য সরকার নতুন করে একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে ১৪০টি সম্প্রদায়কে OBC তালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু মামলাকারীর বক্তব্য, এই সমীক্ষা যথাযথ wasn’t scientifically designed, অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়নি।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ এই অভিযোগের শুনানি করবে। মামলাকারীর দাবি, যেভাবে এই সমীক্ষা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ এবং পূর্বের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত নিয়মাবলীর পরিপন্থী।
Nabanna থেকে সরকারের পাল্টা যুক্তি
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, এই সমীক্ষা সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের নির্দেশনা মেনে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বিধানসভায় জানিয়েছেন, “এই তালিকা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, অনগ্রসরতার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে।’’
সরকারের বক্তব্য, ২০১০ সালের পর বাতিল হওয়া তালিকার ফাঁকফোকর ভরাট করতে এই সমীক্ষা জরুরি ছিল। এবং তা যথাযথ ভাবেই হয়েছে।
এই মামলার পটভূমি কী?
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
পুরনো তালিকা বাতিল | ২০১০ সালের পরবর্তী OBC তালিকা হাইকোর্ট বাতিল করেছিল |
নতুন তালিকা প্রকাশ | রাজ্য সরকার ১৪০টি নতুন সম্প্রদায়ের নাম যুক্ত করে নতুন তালিকা প্রকাশ করে |
সমীক্ষার অভিযোগ | মামলাকারীর দাবি, সমীক্ষা ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট |
মামলার ফলাফল | রাজ্যের কলেজ ভর্তি ও সরকারি চাকরি নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে |
ভর্তির প্রক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলবে এই মামলা?
নতুন OBC তালিকার উপর হাইকোর্টের রায়ের অনেকটাই প্রভাব পড়বে রাজ্যের কলেজ ভর্তি প্রক্রিয়ার উপর। কারণ WB College Admission 2025-র ক্ষেত্রে OBC কোটা নির্ভর করছে এই নতুন তালিকার উপর।
যদি আদালত এই তালিকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিংবা স্থগিতাদেশ দেয়, তাহলে:
- কলেজে OBC কোটা স্থগিত হতে পারে।
- মেধা তালিকা প্রস্তুত করা আটকে যেতে পারে।
- ভর্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
এমনকি চাকরির নিয়োগ ক্ষেত্রেও এই রায় বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। ফলে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীর চোখ এখন এই মামলার দিকে।
OBC সংরক্ষণ মামলা 2025: মামলার মূল পয়েন্ট
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
মামলার ধরণ | হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা (PIL) |
প্রধান অভিযোগ | সমীক্ষা ত্রুটিপূর্ণ |
মামলাকারী | অমলচন্দ্র দাস |
আদালতের বেঞ্চ | বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা |
পরবর্তী শুনানি | আগামী সপ্তাহে সম্ভাব্য |
সম্ভাব্য প্রভাব | কলেজ ভর্তি, চাকরি নিয়োগ |
সরকার বনাম বিরোধী: রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই মামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধী দলগুলি যেমন BJP ও CPM-এর অভিযোগ, রাজ্য সরকার ভোটের আগে তাড়াহুড়ো করে সমীক্ষা করেছে ভোটব্যাংকের স্বার্থে। তবে তৃণমূল সরকারের দাবি, এটা শুধুই পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে করা হয়েছে।
OBC সংরক্ষণ ও রাজ্যের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে প্রভাব
এই মামলার ফলে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্র ও চাকরি নিয়োগ ক্ষেত্র দুটোতেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে:
শিক্ষা ক্ষেত্রে:
- WB College Admission 2025-র মেধা তালিকায় OBC কোটা থাকবে কি না, তা নির্ভর করছে মামলার রায়ের উপর।
- কলেজে ভর্তি বিলম্বিত হতে পারে।
- ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্তি বাড়ছে – কোন ক্যাটাগরিতে ফর্ম ফিলাপ করবেন?
চাকরি ক্ষেত্রে:
- রাজ্য সরকারি চাকরির OBC কোটা স্থগিত বা পরিবর্তিত হতে পারে।
- নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি বিলম্বিত হতে পারে।
- রাজ্য PSC, SSC-এর বিজ্ঞপ্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
উপসংহার
পশ্চিমবঙ্গের OBC সংরক্ষণ ইস্যু ফের আদালতের চৌকাঠে। ১৪০টি সম্প্রদায়কে OBC তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। হাইকোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করছে রাজ্যের কলেজ ভর্তি, চাকরি নিয়োগ সহ অসংখ্য প্রার্থীর ভবিষ্যৎ। এই মামলা রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক – তিন দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আগামী দিনে হাইকোর্টের রায় ঠিক কোন পথে যাবে, সেটাই এখন রাজ্যের ছাত্রসমাজ ও চাকরিপ্রার্থীদের মূল প্রশ্ন।