WB School Summer Vacation News Today: রাজ্যে আবারো প্রচুর গরমে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। প্রচণ্ড দাবদাহে সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না । তারওপর জুন মাসের শুরুতেই স্কুল খোলার পর থেকে দিনের পর দিন তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে লাগাতার। রাজ্যের একাধিক জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে কলকাতা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে চলছে তপ্ত হাওয়া ও দাবদাহ। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলাতেও তীব্র গরমের জন্য স্কুলে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে নাজেহাল হয়ে পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্কুলে পঠনপাঠন চালানো কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষক মহলে। আর সেই কারণেই নবান্ন ফের একবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে বলে সূত্রের খবর। আবারো নতুন করে স্কুল ছুটির ঘোষণা করতে চলেছে নবান্ন।
বাংলার আবহাওয়ার বর্তমান চিত্র (৬ জুন ২০২৫)
কিছুদিন আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হলেও গত কয়েকদিন ধরেই আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা সত্ত্বেও রাজ্যে তাপমাত্রা লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী। বৃষ্টির কোনো নামগন্ধ নেই, বরং দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা ৪১–৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছেছে।
জেলার ভিত্তিতে গড় তাপমাত্রা
জেলা | গড় তাপমাত্রা (°C) | আবহাওয়ার অবস্থা |
---|---|---|
কলকাতা | 40.2 | রোদ্রদাহ |
পূর্ব মেদিনীপুর | 41.5 | দাবদাহ |
বাঁকুড়া | 42.1 | তপ্ত বাতাস |
পুরুলিয়া | 41.8 | শুকনো গরম |
হাওড়া | 39.9 | অস্বস্তিকর গরম |
স্কুল খুললেও ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিত
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ৩১ মে পর্যন্ত রাজ্যের স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ছিল। ২ জুন থেকে পুনরায় পঠনপাঠন শুরু হলেও অধিকাংশ স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ৩০%–৪০%-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই কম ছাত্র-ছাত্রের উপস্থিতিতে শিক্ষক মহলেও তুমুল আলোচনা চলছে গরমের পরিস্থিতি নিয়ে। এছাড়াও অভিভাবকদের বক্তব্য, এমন তাপপ্রবাহের মধ্যে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো নিরাপদ নয়। তাই রাজ্য সরকার আবারো নতুন করে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন।
নবান্নের সিদ্ধান্ত: কী ভাবছে রাজ্য সরকার?
সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাজ্য সরকার ছুটি আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। তবে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রকের একাংশ জানাচ্ছে, পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, তবে পুরো রাজ্যজুড়েই স্কুল বন্ধ রাখা হতে পারে।বর্তমানে বিকল্প হিসেবে কয়েকটি জেলায় চালু হয়েছে Morning School কার্যক্রম। বর্তমান যে পরিস্থিতি এত দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে তীব্র গরম পড়ছে তাই স্কুলে যাওয়ার ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে নাজেহাল হয়ে পড়ছে।
Morning School কার্যক্রমের তালিকা (৪ জুন – ২০ জুন)
জেলা | ক্লাসের সময়সীমা | কার্যকারিতা সময় |
---|---|---|
পুরুলিয়া | সকাল ৬:৩০ – ৯:০০ | ৪ – ২০ জুন |
পূর্ব মেদিনীপুর | সকাল ৬:৩০ – ৯:০০ | ৪ – ২০ জুন |
বাঁকুড়া | সকাল ৬:৩০ – ৯:০০ | ৪ – ২০ জুন |
পশ্চিম বর্ধমান | বিবেচনাধীন | ঘোষণা অপেক্ষায় |
কলকাতা | সিদ্ধান্ত বাকি | নবান্ন পর্যবেক্ষণে |
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত: শিশুরা ঝুঁকির মুখে
চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের গরমে বিশেষত ১০ বছরের কম বয়সী শিশুরা হিট-স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, ঘামাচি, সানবার্ন ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এর পাশাপাশি শিশুদের তীব্র গরমের জন্য মাথা ঘোরা ও শারীরিক আরো বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তাই তাদের জন্য দীর্ঘ সময় রোদের মধ্যে থাকা, বাস জার্নি করে স্কুলে যাওয়া – সবই অত্যন্ত বিপজ্জনক।
শিশুদের জন্য গরমে করণীয় (পরামর্শ)
পরামর্শ | ব্যাখ্যা |
---|---|
প্রচুর জল খাওয়ানো | দিনে অন্তত ৩–৪ লিটার জল পান নিশ্চিত করতে হবে |
হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরানো | সুতি জামা পরাতে হবে যাতে ঘাম শোষণ করতে পারে |
ছাতা বা টুপি ব্যবহার | সরাসরি রোদ থেকে মাথা ঢেকে রাখতে হবে এজন্য ছাতা বা টুপি ব্যবহার করতে হবে |
দুপুরে বের না হওয়া | ১২টা–৩টার মধ্যে বাইরে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে |
ফল ও তরল খাবার খাওয়ানো | ডাবের জল, ফলের রস খাওয়াতে হবে |
আগামী দিনের সম্ভাব্য ঘোষণা
রাজ্যের একাধিক শিক্ষা দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যদি আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা না কমে, তাহলে স্কুল বন্ধ রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সতর্কতা পাঠানো হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট (সারাংশে)
- স্কুল খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম।
- একাধিক জেলায় Morning School শুরু হয়েছে।
- অভিভাবক এবং শিক্ষকরা ছুটি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।
- স্বাস্থ্য দপ্তর শিশুদের রোদ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে।
- নবান্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে, নতুন নির্দেশ যে কোনো সময় আসতে পারে।
FAQs
Q1. WB-তে আবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাড়ানো হচ্ছে?
এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা হয়নি, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় ছুটি বাড়তে পারে।
Q2. কোন কোন জেলায় Morning School চালু হয়েছে?
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুরে চালু হয়েছে, আরও জেলায় কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
Q3. এই গরমে শিশুদের জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার?
Morning School ও স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Q4. কলকাতা জেলায় কি ছুটি ঘোষণা হবে?
এখনো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে নবান্ন পর্যবেক্ষণ করছে।
Q5. যদি আমার বাচ্চা অসুস্থ হয়, আমি কি স্কুলে না পাঠালে সমস্যা হবে?
না, অভিভাবকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। প্রয়োজনে স্কুলে লিখিত জানিয়ে দিন।
পরিশেষে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শীঘ্রই কোনো বড় ঘোষণা আসতে চলেছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আপনার সন্তানের নিরাপত্তাই আগে — তাই প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং সরকার ঘোষিত নিয়ম মেনে চলাই শ্রেয়।