Primary TET Case: ফের চাকরি হারানোর ভয়ে ৩২ হাজার শিক্ষক! সিঁদুরে মেঘ ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হাইকোর্টে শুনানি

কলকাতা: ৩২ হাজার প্রাইমারি চাকরি নিয়ে ফের ধোঁয়াশা। অবশেষে ৩২ হাজার চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে।ফের চরম উৎকণ্ঠায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকদের এক বিশাল অংশ। ৩২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার ভবিষ্যৎ আবার অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে। ২০১৪ সালের প্রাথমিক TET (Teacher Eligibility Test) নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই আদালতের নির্দেশে একাধিক তদন্ত চলছে। এ অবস্থায়, আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হতে চলেছে এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি।

দুর্নীতির গোড়ায়: কী হয়েছিল ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায়?

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না, মেধাতালিকায় অযোগ্য প্রার্থীরাও স্থান পায়—এমনই অভিযোগ ওঠে আদালতে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই ২০২৩ সালের ১৬ মে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন ৩২ হাজার নিয়োগ বাতিলের। যদিও এটা পরবর্তীকালে স্থগিত করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে।

এই রায়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং বহু শিক্ষক আদালতের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায়ে স্থগিতাদেশ দিলেও, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী ৩২ হাজার পদে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশও জারি হয়। বিষয়টি পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়, যেখানে নতুন নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলাটি আবার হাইকোর্টে পাঠানো হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: PIL নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। মঙ্গলবার এক সভায় তিনি বলেন, “যারা চাকরি খাচ্ছে, তাদের নয়—যারা চাকরি দেবে, তাদের উপর ভরসা করুন। PIL করে করে বাংলার সর্বনাশ করছে।” মমতা আরও দাবি করেন, “৩৫ হাজার শিক্ষক ছাঁটাইয়ের ষড়যন্ত্র চলছে।” তাঁর অভিযোগ, এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে এবং জনগণের প্রকৃত স্বার্থ কেউ দেখছে না।

শিক্ষকদের আশঙ্কা: ফের কি চাকরি যাবে?

ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই আন্দোলনে শামিল, কেউ কেউ আবার প্রতিদিন আদালতের বাইরে অবস্থান করছেন। আদালতের রায় তাঁদের জীবিকা ও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এই আশঙ্কা প্রতিদিন বাড়ছে। যেহেতু ২০১৪ প্রাইমারি টেটের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাই এই চাকরিও চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেকের।

CBI তদন্ত ও চার্জশিট

২০১৪ সালের টেট দুর্নীতির মামলায় CBI ইতিমধ্যেই ১১ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে নিয়োগের নেপথ্যে প্রভাব খাটানো, ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতির চিত্র।

পরবর্তী ধাপ কী হতে পারে?

আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে যে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শুরু হতে চলেছে, সেখানে আদালত তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে পারে—

  1. দুর্নীতির প্রমাণ কতটা শক্তিশালী এর উপর নির্ভর করবে  চাকরি।
  2. চাকরিপ্রাপ্তরা আদৌ অযোগ্য কি না সেটা আরো গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।
  3. চাকরি হারানো ব্যক্তিদের বিকল্প কী হতে পারে এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

 চাকরি থাকবে কি যাবে, উত্তরের অপেক্ষায় গোটা রাজ্য

এই মামলার রায় কেবল ৩২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার ভবিষ্যতের দিশা ঠিক করবে না, বরং ভবিষ্যতের শিক্ষানীতি, নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়েও বার্তা দেবে। আপাতত রাজ্যজুড়ে শিক্ষকদের মুখে একটাই প্রশ্ন—চাকরি থাকবে তো?

[FAQ Section]

প্রশ্ন ১: কবে থেকে মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে?
উত্তর: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে হাইকোর্টে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শুরু হবে।

প্রশ্ন ২: কেন এই ৩২ হাজার নিয়োগ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে?
উত্তর: অভিযোগ, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল বহু অযোগ্য প্রার্থীকে।

প্রশ্ন ৩: বর্তমানে শিক্ষকরা কী করছেন?
উত্তর: অনেক শিক্ষক আন্দোলনে শামিল, কেউ কেউ আদালতের বাইরে অবস্থান করছেন।

প্রশ্ন ৪: মামলার রায়ে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে?
উত্তর: চাকরি বাতিল, পুনঃনিয়োগ, অথবা নতুন নিয়োগের নির্দেশ আসতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *