পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর দীর্ঘদিনের দাবি মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলায় আবারও বড় মোড় এসেছে। ১৬ই মে, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মানা হয়নি। এর পরপরই কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে।

IMG 20250525 121244

মামলার পটভূমি

২০০৯ সাল থেকে ডিএ না বাড়ানোর অভিযোগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা যেখানে ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান, সেখানে রাজ্য সরকার মাত্র ১৮ শতাংশ হারে ডিএ দিচ্ছে। এই বিশাল ফারাকই আন্দোলনের অন্যতম কারণ। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর, ২০২৫ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, ২৭শে জুনের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে।

রাজ্য সরকারের অবস্থান

রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা এই মুহূর্তে এত বড় অঙ্কের অর্থ দিতে অক্ষম। আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে সরকার জানায়, প্রায় ১০,৪২৫ কোটি টাকার এই বকেয়া পরিশোধ করতে হলে বাজেট পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং কেন্দ্রের কাছ থেকে ঋণের অনুমতি নিতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।

অর্থনৈতিক যুক্তি

  • রাজ্যের আয় কমছে।
  • একাধিক জনমুখী প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • কেন্দ্র সময়মতো অনুদান দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ।

আদালত অবমাননার অভিযোগ

‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামক সংগঠন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। তারা জানায়, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের শেষ তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোনও টাকা দেওয়া হয়নি, এমনকি কোনও পদক্ষেপের তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি।

অভিযোগের সারাংশ:

  • ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করা হয়েছে।
  • কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্য বঞ্চিত করা হয়েছে।
  • সময় চাওয়ার মাধ্যমে দায় এড়ানোর চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিজেপির বক্তব্য:

“রাজ্যের তৃণমূল সরকার শুধু রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভাবছে, কর্মচারীদের কথা ভাবছে না। সুপ্রিম কোর্টের আদেশও উপেক্ষিত হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের অপমান।”

তৃণমূলের বক্তব্য:

“রাজ্য সরকার আর্থিকভাবে চাপে আছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অনুদান না পাওয়াই এই সমস্যার মূলে। আমরা আদালতের নির্দেশ মানতে চাই, তবে কিছুটা সময় প্রয়োজন।”

কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া

রাজ্যজুড়ে সরকারি কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। অনেকেই বলছেন, সরকারের কথায় আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। সংগঠনের নেতারা বলছেন, আইনি লড়াই চলবে, যতদিন না কর্মচারীরা তাঁদের প্রাপ্য ডিএ পুরোটা পাচ্ছেন।

একটি কর্মচারীর মন্তব্য:

“ডিএ আমাদের অধিকার। এটা ভিক্ষা নয়। সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু কার্যকর করে না। আমরা আন্দোলন ছাড়ব না।”

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি শুনবে অগস্ট মাসে। তখন বিচারপতিরা সিদ্ধান্ত নেবেন, রাজ্য সরকার আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হবে কি না এবং কী শাস্তি হবে।

সম্ভাব্য পরিস্থিতি:

  1. রাজ্যকে সময় দিয়ে অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
  2. রাজ্য সরকারকে আদালতের ক্ষমা চাইতে বলা হতে পারে।
  3. চূড়ান্ত আদেশে আদালত কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটি?

  • এটি শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের অন্য রাজ্যগুলোর জন্যও একটি নজির স্থাপন করবে।
  • ভবিষ্যতে কোনও সরকার যেন কর্মচারীদের প্রাপ্য নিয়ে ছেলেখেলা না করে, তা নিশ্চিত করতে এই মামলার রায় গুরুত্বপূর্ণ হবে।
  • অর্থনৈতিকভাবে এ রায় সরকারের বাজেটেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

FAQ

প্র: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কি বাধ্যতামূলক?
উ: হ্যাঁ, নির্দেশ মানা না হলে আদালত অবমাননার আওতায় পড়ে।

প্র: রাজ্য সরকার কত টাকা বকেয়া রেখেছে?
উ: প্রায় ₹১০,৪২৫ কোটি টাকা।

প্র: এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি কবে?
উ: অগস্ট ২০২৫ (নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা বাকি)।

প্র: এই রায়ে কারা উপকৃত হবেন?
উ: রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীরা।

উপসংহার

ডিএ নিয়ে এই দীর্ঘ আইনি লড়াই শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি সম্মান ও অধিকার নিয়ে প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন হলে রাজ্যের হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী স্বস্তি পাবেন। আবার, যদি রাজ্য সরকার আদালতের রায় অমান্য করতে থাকে, তবে সেটি এক সাংবিধানিক সংকট তৈরি করবে।

সামনে অগস্ট মাসে মামলার রায়ে কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় গোটা রাজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *