রাজ্যে চালু হচ্ছে স্মার্ট মিটার, আর এই স্মার্ট মিটার নিয়ে তৈরি হয়েছে ঝামেলা। এই স্মার্ট মিটার চালু হওয়ায় রাজ্যে বিদ্যুতের খরচ এক লাফে বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন বহু গ্রাহক। কেউ বলছেন আগে ৫০০ টাকার বিল আসতো, এখন সেটা দাঁড়াচ্ছে ১২০০ টাকায়! এই পরিস্থিতির কেন্দ্রে রয়েছে স্মার্ট মিটার (Smart Meter)।
পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটি, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি, মালদা, বাঁকুড়া সহ একাধিক জায়গা থেকে আসছে একটাই অভিযোগ—“স্মার্ট মিটার বসানোর পর বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে, অথচ ব্যবহার বাড়েনি।” আর এই স্মার্ট মিটারে রয়েছে বহু সমস্যা। যদি কারো রিচার্জ শেষ হয়ে যায় তাহলে মাঝরাতেও বিদুৎ চলে যেতে পারে।
স্মার্ট মিটার কী? প্রিপেইড ব্যবস্থার সুবিধা না অসুবিধা?
স্মার্ট মিটার হল একটি আধুনিক প্রিপেইড ইলেকট্রিক মিটার। এটি মোবাইল ফোনের রিচার্জের মতো কাজ করে—আগে টাকা রিচার্জ করতে হবে, তবেই মিলবে বিদ্যুৎ পরিষেবা। টাকা শেষ হলে বিদুৎ পরিষেবা পাওয়া যাবে না।
এছাড়াও, এই মিটার প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ সরাসরি বিদ্যুৎ দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়, ফলে কারচুপি বা বিদ্যুৎ চুরি ধরা পড়ে সহজেই।
বিদ্যুৎ দপ্তরের মতে, এই স্মার্ট মিটার বসানোর প্রধান লক্ষ্য হলো ডিজিটালাইজেশন এবং বিদ্যুৎ চুরি রোধ। তবে সাধারণ মানুষের জন্য এটি একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাড়িয়ে।
গ্রাহকদের অভিযোগ: সম্মতি ছাড়াই মিটার বসানো, বিল বেড়ে যাওয়া
সাধারণ মানুষের একাংশ অভিযোগ তুলছেন যে, তাঁদের অনুমতি ছাড়াই স্মার্ট মিটার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন:
“আগে মাসে যেখানে ৫০০-৬০০ টাকা বিল আসতো, এখন ১২০০ টাকা আসছে অথচ ফ্যান-লাইট আগের মতই চলছে!”
কেউ কেউ ব্যক্তিগত তথ্য নজরদারির আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই মিটারের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে কে কত বিদ্যুৎ খরচ করছে, তার রেকর্ড রাখা হচ্ছে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। আর এর ফলেই জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ, স্মারকলিপি জমা দিয়ে প্রতিবাদ
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ। অনেক জায়গাই এই স্মার্ট মিটার খুলে ফেলে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
নৈহাটিতে দলীয় সংগঠন ও সাধারণ গ্রাহকরা মিছিল করে স্মারকলিপি জমা দেন বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিসে।
শিলিগুড়ি, বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি জেলায় স্মার্ট মিটার খুলে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখছেন:
“আমরা তো ডিজিটাল ভারতের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু ডিজিটাল প্রতারণা চাই না!” এই স্মার্ট মিটার বসিয়ে বিনা কারণে বেশি পরিমাণে বিদুৎ বিল দিতে নারাজ সাধারণ মানুষ।
স্মার্ট মিটার কি বাধ্যতামূলক?
এই প্রশ্ন এখন সকলের মনে।
বিদ্যুৎ দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে স্মার্ট মিটার বসানো বাধ্যতামূলক নয়। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে রাজ্যের সব গ্রাহকের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো হবে। তবে বিদুৎ দপ্তরের দাবি—প্রত্যেক গ্রাহকের সম্মতি নিয়েই মিটার বসানো হবে।
বিদ্যুৎ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন:
“গ্রাহকরা নিজেদের খরচ নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হবে, এবং বিল দেওয়ার ঝামেলা কমবে।” এছাড়াও যে যেমন বিদুৎ খরচ করবে তাদের বিদুৎ বিলটাও সেরকমই আসবে এখানে কোনো কারচুপি চলবে না।
স্মার্ট মিটারের খরচের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
খরচের ধরন | আগের মিটার (রিডিং) | স্মার্ট মিটার (প্রিপেইড) |
---|---|---|
মাসিক বিল (গড়) | ₹500 – ₹700 | ₹900 – ₹1200 |
রিচার্জ পদ্ধতি | বিল আসার পর পেমেন্ট | আগে রিচার্জ করতে হয় |
বিদ্যুৎ সংযোগ | বিল না দিলে বিচ্ছিন্ন নয় | টাকা শেষ হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন |
ট্র্যাকিং | হাতে কলমে হিসাব | ঘন্টাভিত্তিক ডিজিটাল ট্র্যাকিং |
উপসংহার
স্মার্ট মিটার প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হলেও, সঠিক সচেতনতা ও স্বচ্ছতা ছাড়া এর ব্যবহার গ্রাহকদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিদ্যুৎ খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া, সম্মতি ছাড়া বসানো, এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো প্রশ্নের উত্তর না দিলে এই প্রতিবাদ আরও জোরদার হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এর ফলে ডিজিটাল মিটার ঘরে ঘরে বসানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সরকার এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের উচিত স্পষ্ট নীতিমালা প্রকাশ করা, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং যাঁরা চান না তাঁদের ওপর জোর না দেওয়া।
FAQs
1. স্মার্ট মিটার কি বাধ্যতামূলক?
🔹 না, বর্তমানে এটি বাধ্যতামূলক নয়। তবে ২০২৭ সালের মধ্যে সর্বত্র চালুর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
2. স্মার্ট মিটারে বিল বেশি কেন আসছে?
🔹 বিদ্যুৎ দপ্তরের মতে, এটি বাস্তব খরচ দেখায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের বক্তব্য—ব্যবহার না বাড়লেও বিল দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
3. স্মার্ট মিটার বসানোর আগে গ্রাহকের অনুমতি নেওয়া হয় কি?
🔹 অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সম্মতি ছাড়া মিটার বসানো হয়েছে।
4. স্মার্ট মিটারে টাকা শেষ হলে কী হয়?
🔹 প্রিপেইড মডেল হওয়ায় টাকা শেষ হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
5. স্মার্ট মিটারে তথ্য নজরদারি হয় কি?
🔹 প্রতি ঘণ্টার বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য দপ্তরে যায়, যা কিছু গ্রাহক গোপনীয়তা নিয়ে চিন্তিত করে তুলছে।