প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি যোজনার (PM Kisan Samman Nidhi Yojana) অধীনে দেশের প্রায় ১১ কোটি কৃষক আর্থিক সহায়তা পান। তবে এবার সকলের জন্য একটি আপডেট আনা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে। আমরা সকলেই জানি এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি কৃষক বছরে তিনটি কিস্তিতে মোট ₹৬,০০০ টাকা পান সরাসরি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
তবে এবার ২১তম কিস্তি দেওয়ার আগেই কেন্দ্র সরকার জারি করেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা—যারা প্রকল্পের শর্ত মানেননি, তাঁদের নাম সরাসরি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। আপনিও যদি পিএম কিষণ প্রকল্পে টাকা পেয়ে থাকেন তাহলে আপনারও এই ব্যাপারে আগে থেকে সতর্ক হওয়া দরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩১ লক্ষ কৃষকের নাম এইবার বাদ পড়তে পারে। এর কারণ, এঁরা হয় ভুল তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করেছেন, নয়তো প্রকল্পের নতুন নিয়ম মানেননি।
কেন বন্ধ হতে পারে ২১তম কিস্তির টাকা?
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কিছু কৃষক অবৈধ উপায়ে এই প্রকল্পের টাকা নিচ্ছেন। ফলে সরকারের পক্ষে এই টাকা বিতরণের আগে সমস্ত ডেটা যাচাই করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
এই জন্য শুরু হয়েছে দেশব্যাপী ভেরিফিকেশন অভিযান—যেখানে প্রতিটি কৃষকের তথ্য, জমির রেকর্ড ও e-KYC স্ট্যাটাস খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ৩টি শর্ত পূরণ না করলে টাকা বন্ধ হবে
সরকারের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, নিম্নলিখিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম ভাঙলেই PM Kisan তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে।
একটি পরিবারে শুধুমাত্র একজন সুবিধাভোগী
এই প্রকল্পে একটি পরিবার বলতে বোঝায়—স্বামী, স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। নিয়ম অনুযায়ী, এই পরিবার থেকে মাত্র একজন কৃষকই প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা পাবেন।
তবে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই আলাদা নামে রেজিস্ট্রেশন করে টাকা নিচ্ছেন। এই ধরণের ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে—৩১ লক্ষ কৃষকের মধ্যে বহুজন এই ক্যাটাগরিতে পড়ছেন।
| নিয়ম | শর্ত | লঙ্ঘনের ফলাফল |
|---|---|---|
| পরিবারের সদস্য সংখ্যা | একজনের নামেই রেজিস্ট্রেশন | দুইজন থাকলে একজনের নাম বাদ যাবে |
| যাচাই পদ্ধতি | আধার ও ব্যাংক একাউন্ট মিলিয়ে দেখা | ডুপ্লিকেট হলে সুবিধা বন্ধ |
কৃষকের বয়স হতে হবে অন্তত ১৮ বছর
পিএম কিষান যোজনায় সুবিধা পেতে কৃষকের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। তবু, সাম্প্রতিক যাচাইয়ে দেখা গেছে, কিছু নাবালকের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে এই টাকা নেওয়া হয়েছে।
সরকার জানিয়েছে, এমন প্রায় ১.৭৬ লক্ষ নাবালক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলিতে আগামী কিস্তি দেওয়া হবে না।“এই প্রকল্প শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক, জমির মালিক কৃষকদের জন্য। কোনো নাবালক বা নির্ভরশীল সন্তান এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন না,” — কৃষি মন্ত্রকের এক মুখপাত্রের বক্তব্য।
জমির মালিকানা থাকতে হবে এবং ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর আগে নিবন্ধন
এই প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো—যে কৃষকরা ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর পরে জমি কিনেছেন, তাঁরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না।
এর কারণ, যোজনাটি চালু হওয়ার সময় যাঁরা প্রকৃত কৃষক ছিলেন, তাঁদের সহায়তা করাই এর উদ্দেশ্য। ফলে ২০১৯ সালের পরে যাঁরা নতুনভাবে কৃষিজমির মালিক হয়েছেন, তাঁরা আর যোগ্য নন।
এই নিয়মে প্রায় ৮ লক্ষ কৃষক বাদ পড়তে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। জমির রেকর্ড ও রাজস্ব দফতরের তথ্য মিলিয়ে যাচাই শুরু হয়েছে।
কীভাবে যাচাই করবেন আপনি যোগ্য কিনা
আপনার নাম তালিকায় আছে কিনা বা পরবর্তী কিস্তির টাকা পাবেন কিনা, তা খুব সহজেই চেক করা যায়।
নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
- পিএম কিষান অফিসিয়াল পোর্টালে যান: 👉 pmkisan.gov.in
- হোমপেজে “Know Your Status” অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার PM Kisan রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ক্যাপচা কোড লিখুন।
- “Get OTP” ক্লিক করে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে আসা OTP দিন।
- এখন স্ক্রিনে আপনার সম্পূর্ণ অ্যাকাউন্টের তথ্য দেখতে পাবেন।
Eligibility Status-এ যদি “ Yes” লেখা থাকে, এবং
Land Seeding ও e-KYC সম্পন্ন থাকে,
তাহলে নিশ্চিন্ত থাকুন—২১তম কিস্তির টাকা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সময়মতো পৌঁছে যাবে।
PM Kisan যোজনার মূল উদ্দেশ্য
পিএম কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে।
এর আওতায় কৃষকদের বছরে ₹৬,০০০ দেওয়া হয়—যা তিন কিস্তিতে ₹২,০০০ করে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
| বিষয় | বিস্তারিত |
|---|---|
| প্রকল্পের নাম | প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি (PM Kisan Samman Nidhi) |
| চালু বছর | ২০১৯ |
| প্রতি কৃষক বার্ষিক সহায়তা | ₹৬,০০০ |
| কিস্তির সংখ্যা | বছরে ৩টি |
| মোট সুবিধাভোগী (২০২৫ অনুযায়ী) | প্রায় ১১ কোটি কৃষক |
| সর্বশেষ কিস্তি (২০তম) | জুলাই ২০২৫ |
| আসন্ন কিস্তি (২১তম) | নভেম্বর–ডিসেম্বর ২০২৫ (সম্ভাব্য) |
কেন এত কড়াকড়ি যাচাই শুরু হলো
সাম্প্রতিক অডিটে দেখা গেছে, অনেক কৃষক প্রকৃত চাষী না হয়েও এই যোজনার টাকা নিচ্ছেন।
অনেকে শহরে চাকরি করেন, কিন্তু গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে এই প্রকল্পের সুবিধা নিয়েছেন।
এইসব জালিয়াতি রোধ করতে কেন্দ্র সরকার ‘Digital Verification System’ চালু করেছে, যেখানে প্রতিটি সুবিধাভোগীর তথ্য আধার, ব্যাংক ও ভূমি রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।
কৃষি মন্ত্রক জানিয়েছে—
“এই পদক্ষেপ প্রকৃত কৃষকদের সুরক্ষা দেবে এবং জালিয়াতদের বাদ দেবে। ভবিষ্যতে e-KYC না করলে বা ভুল তথ্য দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।”
e-KYC সম্পন্ন না করলে কিস্তি আটকে যাবে
২০২৪ সাল থেকে কেন্দ্র সরকার e-KYC বাধ্যতামূলক করেছে। যেসব কৃষক এখনও e-KYC করেননি, তাঁদের অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।
তাই আপনার অ্যাকাউন্ট যাচাই করতে নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
- pmkisan.gov.in ওয়েবসাইটে যান
- “e-KYC” অপশনে ক্লিক করুন
- আধার নম্বর দিয়ে OTP যাচাই করুন
- সফল হলে “e-KYC Completed Successfully” মেসেজ দেখাবে
PM Kisan App দিয়েও চেক করতে পারেন
যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাঁরা PM Kisan Mobile App ডাউনলোড করে কিস্তির স্ট্যাটাস, e-KYC ও নামভুক্তির তথ্য এক ক্লিকে দেখতে পারেন।
এই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়াও আধার নম্বর ব্যবহার করে লগইন করা যায়।
২১তম কিস্তির সম্ভাব্য তারিখ
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ২১তম কিস্তির টাকা নভেম্বর বা ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হতে পারে।
তবে তার আগে সমস্ত ডেটা যাচাই সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য রাজ্য সরকার ও কৃষি দপ্তর মিলিতভাবে কাজ করছে।
যেসব কৃষক বাদ পড়বেন, তাঁদের কী করতে হবে
যদি আপনার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে, চিন্তার কিছু নেই। আপনি নিচের ধাপগুলো মেনে পুনরায় আবেদন করতে পারেন:
- নিবন্ধন নবীকরণ (Re-verification): স্থানীয় কৃষি অফিসে গিয়ে সঠিক নথি দিন।
- জমির রেকর্ড জমা দিন: নামজারি ও খতিয়ান কপি জমা রাখতে হবে।
- e-KYC সম্পন্ন করুন: আধার ও মোবাইল লিঙ্ক থাকতে হবে।
- অপেক্ষা করুন: যাচাই সম্পন্ন হলে আবার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কৃষক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
একদিকে সরকার বলছে—এই পদক্ষেপ স্বচ্ছতা আনবে,
অন্যদিকে কিছু কৃষক মনে করছেন—অনেক প্রকৃত কৃষকও ভুল তথ্যের কারণে বাদ পড়তে পারেন।
কৃষক সংগঠনগুলির দাবি,“যাঁরা বছরের পর বছর প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন, তাঁদের একবারে বাদ না দিয়ে নোটিশ দিয়ে সময় দেওয়া উচিত।”
উপসংহার
২১তম কিস্তির আগে সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ PM Kisan প্রকল্পকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে চলেছে।
যারা সমস্ত শর্ত পূরণ করেছেন—তাঁদের চিন্তার কিছু নেই।
তবে যাঁরা এখনো e-KYC, জমির রেকর্ড বা পরিবারের তথ্য আপডেট করেননি—তাঁদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
