রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না। রাজ্যে একের পর এক প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ মামলার জন্য পিছিয়ে যাচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে ২০২২ এ প্রাইমারি টেট পরীক্ষা নিয়ে রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়েছে এবং ২০২৩ সালের টেট পরীক্ষা নিয়ে এখনো রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়নি। পর্ষদ সভাপতি বলেছিলেন বছরে দুবার করে নিয়োগ প্রক্রিয়া দেওয়া হবে এবং প্রতিবছর টেট নেওয়া হবে। কিন্তু এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ করা হচ্ছে না দীর্ঘ ৩ বছর হতে চলল। এরই মধ্যে আবার ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া (Primary Teacher Recruitment 2022) নিয়ে ফের কলকাতা হাইকোর্টে উঠল নতুন মামলা। ৫০০র বেশি পিটেশনার নতুন করে এই মামলায় যুক্ত হয়েছে যারা d.el.ed complete করে রয়েছে, তবে কি এই মামলা এবং কারা ও কিভাবে এই মামলা দায়ের করেছে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নিয়োগের প্রেক্ষাপট: কী নিয়ে শুরু হয়েছিল বিতর্ক?
রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ২০২২ সালে 11,765টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। নিয়মানুযায়ী, TET উত্তীর্ণ এবং D.El.Ed প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে অনেক চাকরিপ্রার্থী ইতিমধ্যে চাকরি পেয়ে গিয়েছে।
কিন্তু, সম্প্রতি পর্ষদ একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলার অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীরাই ৯ জুন থেকে শুরু হতে চলা ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন (নথি যাচাই) প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এখানেই সৃষ্টি হয় বিরোধের। এখানে নতুন করে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে সকল ডি এল এড প্রার্থীরা বসতে পারলেও যারা NIOS থেকে D.EL.ED সম্পূর্ণ করে রয়েছেন তাদের নিয়েই রয়েছে ঝামেলা। কারণ এই বিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে যেগুলো NIOS প্রার্থীদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এরপরেই তারা একত্রিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার মূল অভিযোগ কী?
হাইকোর্টে দাখিল করা মামলায় NIOS প্রার্থীদের আইনজীবী যুক্তি দেন—
সুপ্রিম কোর্ট পূর্বে একটি রায়ে সমস্ত NIOS থেকে D.El.Ed করা প্রার্থীদের নিয়োগযোগ্য হিসাবে বৈধতা দিয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে পর্ষদের ভুল নাকি শিক্ষার্থীদের বুঝতে ভুল সেটি এখানে দেখার বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছিল NIOS প্রার্থীরা তখনই বৈধ হবেন যখন তারা অন্য কোন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন সেই তথ্য দেখানোর পরে। তবে যদি কেউ শিক্ষকতা না করে অবৈধভাবে NIOS সার্টিফিকেট বের করে নেয় সেই জন্যই পর্ষদের তরফ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু এই অভিযোগে বলা হয়েছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সেই নির্দেশকে লঙ্ঘন করে তাঁদের বাদ দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী, যা প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে। কিন্তু এখানে সব থেকে বড় কথা হলো যারা NIOS থেকে ডিএলএড করেছেন তারা কি অরিজিনালি কোন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন নাকি অবৈধভাবে NIOS সার্টিফিকেট বের করে চাকরির জন্য দাবী জানাচ্ছেন এই জন্যই পর্ষদের তরফ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি।
আন্দোলনরত প্রার্থীদের দাবি:
আন্দোলনকারী প্রার্থীরা এককথায় চাইছেন—
- NIOS থেকে D.El.Ed করা সমস্ত যোগ্য প্রার্থীকে অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক। পর্ষদের তরফ থেকে যে সমস্ত ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে সেগুলো তাদের কাছে নেই এবং তারা দিতে পারবে না।
- তাঁদেরও ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য ডাকা হোক, কারণ তাঁরা যথাযথ যোগ্য। যোগ্য হওয়ার দরুন তারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
তাঁদের মতে, এই একতরফা সিদ্ধান্তে বহু প্রতিভাবান ও যোগ্য প্রার্থী আজ চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?
জানা গেছে, এই মামলার শুনানি খুব শীঘ্রই কলকাতা হাইকোর্টে অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী এখন এই রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই রায় শুধু NIOS প্রার্থীদের জন্য নয়, বরং পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এই রায়ের উপর ২০২২ এ টেট পাশ প্রার্থীদের চাকরির সম্ভাবনাও অনেকটা নির্ভরশীল। তাই এই রায় প্রাইমারি টেট পাশ প্রার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রায় হতে চলেছে।
কেন এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ?
এই মামলাটি শুধু কয়েকজন প্রার্থীর চাকরি পাওয়ার বিষয় নয়। এটি রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার:
- ✅ স্বচ্ছতা (Transparency),
- ✅ বৈধতা (Legitimacy),
- ✅ ও দীর্ঘসূত্রিতা (Delay)-র প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
যদি আদালতের রায় আবার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে বা নতুন নির্দেশ দেয়, তাহলে পুরো প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এর ফলে যারা ২০২২ এ টেট পাস করে রয়েছে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও আরো পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সারসংক্ষেপ: বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে নিয়োগ?
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ | ২০২২ সালে (প্রাথমিক শিক্ষক পদে 11,765 শূন্যপদে) |
যোগ্যতা | TET উত্তীর্ণ এবং D.El.Ed (সমেত NIOS D.El.Ed) |
বিতর্কের কারণ | NIOS প্রার্থীদের বাদ দেওয়া ও শুধুমাত্র মামলাকারীদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন অনুমোদন |
নতুন মামলা | ৫০০+ NIOS প্রার্থী হাইকোর্টে মামলা দায়ের |
ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন | ৯ জুন ২০২৫ থেকে শুরু হওয়ার কথা |
আদালতের রায় | শীঘ্রই প্রত্যাশিত |
পাঠকদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা:
আপনি যদি ২০২২ সালের প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে থাকেন, বিশেষ করে NIOS D.El.Ed প্রার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার:
- ✅ আদালতের রায় সম্পর্কে আপডেট থাকা জরুরি।
- ✅ ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
- ✅ প্রয়োজনে নিজস্ব আইনি পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
FAQs: ২০২২ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
Q1: NIOS D.El.Ed প্রার্থীরা কি এই নিয়োগে বৈধ?
হ্যাঁ, সুপ্রিম কোর্ট পূর্বে এদের বৈধ বলে ঘোষণা করেছিল, তবে বর্তমান বিতর্ক নিয়োগ পর্ষদের নতুন বিজ্ঞপ্তি ঘিরে।
Q2: ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কবে শুরু?
এটি ৯ জুন ২০২৫ থেকে শুরু হওয়ার কথা।
Q3: NIOS প্রার্থীদের মামলা কোথায় দায়ের হয়েছে?
কলকাতা হাইকোর্টে একটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে।
Q4: আদালতের রায়ের প্রভাব কী হবে?
রায়ের ভিত্তিতে হয়তো নতুন করে সকল প্রার্থীর ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন ডাকতে হতে পারে বা নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিতও হতে পারে।
শেষ কথা:
২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের এই নতুন মামলাটি রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এই রায় নাম এটা পর্যন্ত নতুন করে যারা ২০২২ এ তে পাস করেছেন তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দেওয়া সম্ভব হবে না পর্ষদের তরফ থেকে। আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করছে হাজার হাজার প্রার্থীর ভবিষ্যৎ। আশা করা যায়, হাইকোর্ট একটি নিরপেক্ষ ও দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের ন্যায্য অধিকার পুনরুদ্ধার করবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় ইতি টানবে।